ফরিদপুরে খানাখন্দ সড়কে অতিরিক্ত গতিতে ওভারটেকিংয়ে ঝড়ল ৭ প্রাণ
ফরিদপুরে খানাখন্দ সড়কে লোকাল বাসের অতিরিক্ত গতির কারনেই দুর্ঘটনায় ঝড়ে গেছে ৭ জনের প্রাণ। প্রাথমিক তদন্তে এমন তথ্য উঠে এসেছে বলে প্রশাসন জানিয়েছেন। এছাড়া লোকাল বাসের চালকদের অদক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিহতের স্বজনরা। ঘটনা তদন্তে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যা।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে ফরিদপুর জেলা সদরের ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের বাখুন্ডা এলাকার শরীফ জুট মিলের সামনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলে ৫ জন মারা যায় এবং ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আরও দুইজন। এছাড়া আহত হয়েছেন প্রায় ৩০ জন।
নিহতদের মধ্যে ৪জন পুরুষ ও ৩ জন নারী রয়েছে। তাঁরা হলেন, নগরকান্দা উপজেলার শেয়ারকান্দি গ্রামের জোয়ার সর্দার (৬৫), তাঁর ছেলে ইমান সর্দার (২৮), কাঠিয়া বড়গ্রামের রাজিব খানের স্ত্রী দীপা খান (৩৪), জেলা সদরের চরচাঁদপুর গ্রামের বলরাম সরকারের স্ত্রী মালতী সরকার (৪০), জেলা শহরের মোল্লাবাড়ি সড়ক এলাকার ফজিরুন নেছা (৬০), চরভদ্রাসন উপজেলার হাজিগঞ্জের আলম মিয়া (৪০) ও লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার পূর্ব ফকিরপাড়ার আজিবুর হোসেন (৪০)। বিকাল ৩ টার দিকে নিহতদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের বরাতে জানা যায়, মুকসুদপুর থেকে ফরিদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে আসা ফারাবি এন্টারপ্রাইজ নামে লোকাল বাসটি বাখুন্ডা এলাকায় পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারায়। এরপর সেটি সড়কের পাশে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে খাদে উল্টে পড়ে যায়। ঘটনার পড়ে খবর পেয়ে নিহত ও আহতদের উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী ও থানা পুলিশের সদস্যরা।
বাসটি অতিরিক্ত গতিতে চালানোর কারনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিপরীত লেনে চলে গিয়ে সড়কের পাশে থাকা বিদ্যুতের খুটিতে ধাক্কা লাগে বলে ফরিদপুর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদউজ্জামান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে সড়কটিতে খানাখন্দ রয়েছে। এই খানাখন্দ সড়কে বাসটির চালক অতিরিক্ত গতিতে চালাচ্ছিলেন।
এ বিষয়ে ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, গাড়িটি বাম লেনে থাকার কথা ছিল কিন্তু ডান লেনে চলে যায়। এছাড়া বাসটির চালক অতিরিক্ত গতিতে ওভারটেকিং করতে গিয়ে মূলত এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইশরাত জাহান। তিনি বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, বাসের গতি ৮০ কিলোমিটারের ঊর্ধ্বে ছিল। চালকের বেপরোয়া গতির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’
এদিকে দুর্ঘটনার পর ক্ষোভ জানিয়েছেন নিহতের স্বজনরা। তাঁরা এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচারের দাবি জানিয়েছেন। নিহত জোয়ার সর্দারের বড় ছেলে সাহেদ সর্দার অভিযোগ করে বলেন, এই অপরাগ কিছু ড্রাইভার লাইসেন্স ছাড়া, নিয়ন্ত্রণ ছাড়া গাড়ি চালায়। এদের ব্যাখ্যা মালিক সমিতিও নেয় না, সরকার পক্ষও নেয় না। সেই কারনে আমাদের মা-বোনের প্রাণ যাচ্ছে। আজ যদি ড্রাইভাররা নিয়ন্ত্রণ করে গাড়ি চালাতো, আমার বাবা ও ভাই মারা যেত না। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
ঘটনার পর ঘটনাস্থল ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে নিহত ও আহতদের খোঁজ নেন জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যাসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ। জেলা প্রশাসক জানান, এ দুর্ঘটনার কারণ জানতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিন্টু বিশ্বাসকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ওই প্রতিবেদন ও সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া নিহত প্রতিটি পরিবারকে প্রাথমিকভাবে দাফনের জন্য ২৫ হাজার করে টাকা দেয়া হবে এবং পরবর্তীতে বিআরটিএর মাধ্যমে তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।