ঢাকা ০৫:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধীদের সাথে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় ফরিদপুরে কৃষককে অপহরণের ৭ দিনেও মিলেনি সন্ধান, মুক্তিপণ দাবি দালালের খপ্পরে সৌদি গিয়ে নিখোঁজ দুই ভাই ফরিদপুরে শ্যামা ওবায়েদের গাড়ীবহরে হামলার মামলায় আওয়ামীলীগের ১৯ নেতাকর্মী কারাগারে সালথা বিএনপির নেতা নাসির গ্রেপ্তার বাংলাদেশ প্রেসক্লাব সদরপুর শাখার সভাপতি শিমুল – সম্পাদক রাজিব ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মাসুদের দাফন সম্পন্ন। ফরিদপুর জজকোর্ট পৌর মার্কেটে অবৈধ্য দোকান নির্মানের অভিযোগ কোটালীপাড়ায় ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ীতে দুধর্ষ চুরি রাজবাড়ীতে পদ্মানদীতে ধরা পড়লো ২৮ কেজি ওজনের কাতল মাছটি  বিক্রি হল ৫০ হাজার টাকা

ফরিদপুরে কৃষককে অপহরণের ৭ দিনেও মিলেনি সন্ধান, মুক্তিপণ দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

 

ফরিদপুরে বাড়ি থেকে জমির কাগজপত্র নিয়ে বের হয়ে ফরিদ খান (৫০) এক কৃষক অপহরণের শিকার হয়েছেন বলে পরিবার অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিলেও গত ৭ দিনে সন্ধান মিলেনি তাঁর। নিখোঁজ হওয়ার দুইদিন পর থেকে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন থেকে অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা ফোন দিয়ে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করছেন বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।
নিঁখোজ ফরিদ খান ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের রামখন্ড গ্রামের মৃত দলিল উদ্দিন খানের ছেলে। তাঁর এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। গত ০১লা মে দুপুর ২ টার দিকে ফরিদপুরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হোন তিনি। এরপর রাতে বাড়িতে না ফিরলে বিভিন্ন জায়গা খুঁজতে থাকে পরিবারের সদস্যরা। সন্ধান না পেয়ে পরেরদিন ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন তার বোন নুরুন্নাহার বেগম।

পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, প্রতিবেশী আবু তালেব ও করিম মোল্যাদের সাথে ১৫ বিঘা জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এই জমি সংক্রান্ত মামলায় আগামী ১৬ মে আদালতের রায় হবে। সেই লক্ষ্যে আইনজীবীর সাথে দেখা করার জন্য জমির দলিলপত্র সহ সকল কাগজপত্র নিয়ে বের হোন।

মঙ্গলবার (৬ মে) বিকালে ওই কৃষকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় রয়েছে পরিবার। বাড়িতে পাড়া-প্রতিবেশীসহ স্বজনরা ভিড় করছেন। ছেলের ছবি হাতে নিয়ে বিলাপ করছেন সত্তরোর্ধ্ব মা আছিয়া বেগম। সাংবাদিকদের দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী রাহিমা বেগম ও সন্তানেরা।
স্ত্রী রাহিমা বেগম জানান, নিখোঁজের দিন সারাদিন মাঠের কাজ করে দুপুরে কাগজপত্র নিয়ে ফরিদপুরে উকিলের সাথে দেখা করার জন্য বের হয়। যাওয়ার পথে কানাইপুর বাজার থেকে সকল কাগজের ফটোকপিও করেন। এরপর রাতে বাড়িতে না আসায় আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে খুজতে থাকি। কিন্তু কোথাও পাইনি। পরেরদিন রাতে তার মোবাইল নাম্বার খোলা পাই, তখন কল দিলে অপরিচিত একজন রিসিভ করে বলে উনাকে পেতে হলে তিন লাখ টাকা লাগবে। এরপর মোবাইল বন্ধ করে রাখে। দুইদিন পর আবারও ফোন দিয়ে বলে, তিন লাখ টাকা দিলে যেখান থেকে এনেছি, সেখানে দিয়ে আসব। সর্বশেষ ৪ তারিখে কথা হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ঘটনাটি থানায় জানালে পুলিশ কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেনা। পুলিশ বলতেছে, লোকেশন দেখা যাচ্ছে কিন্তু উদ্ধার করতেছে না। আমরা গরিব মানুষ বলে আমার স্বামীকে কি ফিরে পাব না। আমার স্বামীকে ফেরত চাই। আমার স্বামী ফিরে না এলে ছেলে-মেয়ে নিয়ে কিভাবে বাঁচব। আমার স্বামীকে দ্রুত ফিরিয়ে দেখ এবং যারা অপহরণ করেছে তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
বাবাকে ফিরে পেতে ঢুকরে ঢুকরে কাঁদতে দেখা যায় ছোট মেয়ে ফারজানাকে। তারা বাবাকে দ্রুত ফিরিয়ে দেয়ার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করেন। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধে এর আগে তাকে মারধর করে ফেলে রাখেন প্রতিপক্ষের লোকজন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।
এদিকে এক কল রেকর্ডে ওই কৃষককে বলতে শোনা যায়, আমি ভাল আছি। ওনাদের সাথে কথা হচ্ছে তিন লাখ টাকা থেকে কমানোর জন্য।
এ বিষয়ে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদউজ্জামান জানান, তাকে উদ্ধারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তার মোবাইল ট্রাকিং করে চরভদ্রাসন, দারীপুরের শিবচর ও মুন্সিগঞ্জের দুর্গম এলাকায় দেখা যাচ্ছে। তবে অবস্থান পরিবর্তন করায় এবং সব সময় মোবাইল খোলা না পাওয়ায় শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।

 

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য
আপডেট সময় ০৬:১২:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫
২৩ বার পড়া হয়েছে

ফরিদপুরে কৃষককে অপহরণের ৭ দিনেও মিলেনি সন্ধান, মুক্তিপণ দাবি

আপডেট সময় ০৬:১২:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫

 

ফরিদপুরে বাড়ি থেকে জমির কাগজপত্র নিয়ে বের হয়ে ফরিদ খান (৫০) এক কৃষক অপহরণের শিকার হয়েছেন বলে পরিবার অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিলেও গত ৭ দিনে সন্ধান মিলেনি তাঁর। নিখোঁজ হওয়ার দুইদিন পর থেকে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন থেকে অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা ফোন দিয়ে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করছেন বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।
নিঁখোজ ফরিদ খান ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের রামখন্ড গ্রামের মৃত দলিল উদ্দিন খানের ছেলে। তাঁর এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। গত ০১লা মে দুপুর ২ টার দিকে ফরিদপুরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হোন তিনি। এরপর রাতে বাড়িতে না ফিরলে বিভিন্ন জায়গা খুঁজতে থাকে পরিবারের সদস্যরা। সন্ধান না পেয়ে পরেরদিন ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন তার বোন নুরুন্নাহার বেগম।

পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, প্রতিবেশী আবু তালেব ও করিম মোল্যাদের সাথে ১৫ বিঘা জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এই জমি সংক্রান্ত মামলায় আগামী ১৬ মে আদালতের রায় হবে। সেই লক্ষ্যে আইনজীবীর সাথে দেখা করার জন্য জমির দলিলপত্র সহ সকল কাগজপত্র নিয়ে বের হোন।

মঙ্গলবার (৬ মে) বিকালে ওই কৃষকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় রয়েছে পরিবার। বাড়িতে পাড়া-প্রতিবেশীসহ স্বজনরা ভিড় করছেন। ছেলের ছবি হাতে নিয়ে বিলাপ করছেন সত্তরোর্ধ্ব মা আছিয়া বেগম। সাংবাদিকদের দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী রাহিমা বেগম ও সন্তানেরা।
স্ত্রী রাহিমা বেগম জানান, নিখোঁজের দিন সারাদিন মাঠের কাজ করে দুপুরে কাগজপত্র নিয়ে ফরিদপুরে উকিলের সাথে দেখা করার জন্য বের হয়। যাওয়ার পথে কানাইপুর বাজার থেকে সকল কাগজের ফটোকপিও করেন। এরপর রাতে বাড়িতে না আসায় আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে খুজতে থাকি। কিন্তু কোথাও পাইনি। পরেরদিন রাতে তার মোবাইল নাম্বার খোলা পাই, তখন কল দিলে অপরিচিত একজন রিসিভ করে বলে উনাকে পেতে হলে তিন লাখ টাকা লাগবে। এরপর মোবাইল বন্ধ করে রাখে। দুইদিন পর আবারও ফোন দিয়ে বলে, তিন লাখ টাকা দিলে যেখান থেকে এনেছি, সেখানে দিয়ে আসব। সর্বশেষ ৪ তারিখে কথা হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ঘটনাটি থানায় জানালে পুলিশ কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেনা। পুলিশ বলতেছে, লোকেশন দেখা যাচ্ছে কিন্তু উদ্ধার করতেছে না। আমরা গরিব মানুষ বলে আমার স্বামীকে কি ফিরে পাব না। আমার স্বামীকে ফেরত চাই। আমার স্বামী ফিরে না এলে ছেলে-মেয়ে নিয়ে কিভাবে বাঁচব। আমার স্বামীকে দ্রুত ফিরিয়ে দেখ এবং যারা অপহরণ করেছে তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
বাবাকে ফিরে পেতে ঢুকরে ঢুকরে কাঁদতে দেখা যায় ছোট মেয়ে ফারজানাকে। তারা বাবাকে দ্রুত ফিরিয়ে দেয়ার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করেন। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধে এর আগে তাকে মারধর করে ফেলে রাখেন প্রতিপক্ষের লোকজন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।
এদিকে এক কল রেকর্ডে ওই কৃষককে বলতে শোনা যায়, আমি ভাল আছি। ওনাদের সাথে কথা হচ্ছে তিন লাখ টাকা থেকে কমানোর জন্য।
এ বিষয়ে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদউজ্জামান জানান, তাকে উদ্ধারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তার মোবাইল ট্রাকিং করে চরভদ্রাসন, দারীপুরের শিবচর ও মুন্সিগঞ্জের দুর্গম এলাকায় দেখা যাচ্ছে। তবে অবস্থান পরিবর্তন করায় এবং সব সময় মোবাইল খোলা না পাওয়ায় শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।