ঢাকা ০২:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ফরিদপুরে বাড়িঘরে অগ্নিকান্ড ও লুটপাট, পালিয়ে বেড়াচ্ছে নির্যাতিত নারী ফরিদপুরে নিষিদ্ধ হওয়া আ.লীগের ২১ নেতাকর্মীকে কারাগারে প্রেরণ ফরিদপুরে বিক্রি হওয়া শিশু তানহাকে দেয়া হলো মায়ের জিম্মায়, আগামী ২ জুন শুনানি ফরিদপুর জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি-সম্পাদক পদ শূন্য ঘোষণা, নতুন দায়িত্ব প্রদান ফরিদপুরে হামলার ৯ দিনেও হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন ব্যবসায়ী, তিন আসামীর জামিন-গ্রেপ্তার নেই কেউ ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধীদের সাথে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় ফরিদপুরে কৃষককে অপহরণের ৭ দিনেও মিলেনি সন্ধান, মুক্তিপণ দাবি দালালের খপ্পরে সৌদি গিয়ে নিখোঁজ দুই ভাই ফরিদপুরে শ্যামা ওবায়েদের গাড়ীবহরে হামলার মামলায় আওয়ামীলীগের ১৯ নেতাকর্মী কারাগারে সালথা বিএনপির নেতা নাসির গ্রেপ্তার

ফরিদপুরে বাড়িঘরে অগ্নিকান্ড ও লুটপাট, পালিয়ে বেড়াচ্ছে নির্যাতিত নারী

নিজস্ব প্রতিবেদক

 

ফরিদপুরের মধুখালীতে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে ধর্মীয় অপবাদ দিয়ে একটি পরিবারকে উচ্ছেদ করতে করতে বসতবাড়িতে অগ্নিকান্ড ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ওই পরিবারের লাভলী আক্তার (৩৮) নামে এক নারী মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। এমন নির্যাতনের শিকার হয়ে ও বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁরা। ঘটনার একমাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার না করায় দিশেহারা হয়ে বিচারের আশায় পথে পথে ঘুরছেন পরিবারটি।

ফরিদপুর শহরে একটি পত্রিকা অফিসে সংবাদ সম্মেলন করেন লাভলী আক্তার। এ সময় তার বৃদ্ধা মা খোদেজা বেগম ও এক শিশু সন্তান উপস্থিত ছিলেন। লাভলী আক্তার মধুখালী উপজেলার কামারখালী পূর্ব আড়পাড়ার মৃত গুল মোহাম্মাদের একমাত্র মেয়ে। তিনি দীর্ঘ ১৪ বছর ব্রিটিশ হাইকমিশনের সিকিউরিটি এন্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগে চাকরি করেছেন।

লাভলী আক্তার সংবাদ সম্মেলনে জানান, দীর্ঘদিন ব্রিটিশ হাইকমিশনে চাকরির সুবাদে তাঁর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে ব্রিটিশ নাগরিক ডেরেক গ্রিফিথসের সাথে। এক পর্যায়ে তারা বিয়ে করেন। তার স্বামী খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী হওয়ার বিষয়টি স্থানীয় প্রতিপক্ষ জানতে পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। গত বছরের জুনে চাকরি ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসলে স্থানীয়রা নানাভাবে নির্যাতন চালাতে থাকে। এক পর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যান জাকির খানের নির্দেশে তাকে পুকুরের পানিতে চুবিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে স্থানীয়রা।

তিনি বলেন- স্থানীয় গোলাম খন্দকার, কামরুল খন্দকার, আলী শেখ গংদের সাথে ওয়ারিশ সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত বিরোধ রয়েছে। এর জেরে আমাদের উচ্ছেদ করতে ধর্মীয় অপবাদ দিয়ে গত ১২ এপ্রিল রাত ১০ টার দিকে স্থানীয় ইউপি সদস্য আলী শেখের নেতৃত্বে কয়েকশ দুর্বৃত্ত আমার বাড়িঘর লুটপাট ও ভাঙচুর করে। তখন আমি ত্রিপল নাইনে কল দিয়ে পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে দুজনকে আটক করে নিয়ে যায়। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে রাত ৩ টার দিকে আমার নির্মাণাধীন তিনতলা ভবন ও অন্যান্য বসতঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এছাড়া আমার হাঁস-মুরগির খামারসহ প্রায় ৫০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় এবং পুকুরে বিষ দিয়ে মাছ মেরে ফেলে। এমন ভয়াবহ ঘটনা আমাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, এ ঘটনায় ২১ জনের নাম উল্লেখ করে মধুখালী থানায় মামলা করলে পুলিশ আজও কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরেবেড়াচ্ছে এবং আমার নামে মানহানিকর তথ্য অপপ্রচার করে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। ভয়ে মা ও সন্তানকে নিয়ে অসহায় অবস্থায় পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছি, আমার বসতবাড়িতেও যেতে পারছি না। আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। আমি প্রশাসনের কাছে গেলেও বিচার পাচ্ছি না। আমার কোনো কথাই শুনছেন না। আমার সমস্ত মালামাল উদ্ধারসহ ন্যায়বিচার দাবি করছি।

লাভলী আক্তারের মা খোদেজা বেগম বলেন- এই জমিজমা নিয়ে ওরা আমার আব্বাকেও (লাভলীর নানা) ডেকে হত্যা করে সমস্ত জমিজমা দখল করে নিয়ে যায়। বর্তমানে আমার মেয়ে সেই জমি উদ্ধারে কাজ করতে গেলেই শত্রু হয়ে যায়। আমার মেয়েকে মেরে ফেলতে পারলে সব জমিজমা ওদের হয়ে যাবে।

এদিকে এসব বিষয়ে জানতে স্থানীয় ইউপি সদস্য আলী শেখের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকার ফোন করলে কেটে দেয়ায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম নুরুজ্জামান বলেন, লাভলী আক্তারের ভবন তোলার সময় রাস্তার পাশে জায়গা নিয়ে স্থানীয়দের সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে ধর্মীয় অপবাদ দিয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে সেটি আমার জানা নেই।

 

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য
আপডেট সময় ১০:২২:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫
১৯ বার পড়া হয়েছে

ফরিদপুরে বাড়িঘরে অগ্নিকান্ড ও লুটপাট, পালিয়ে বেড়াচ্ছে নির্যাতিত নারী

আপডেট সময় ১০:২২:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫

 

ফরিদপুরের মধুখালীতে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে ধর্মীয় অপবাদ দিয়ে একটি পরিবারকে উচ্ছেদ করতে করতে বসতবাড়িতে অগ্নিকান্ড ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ওই পরিবারের লাভলী আক্তার (৩৮) নামে এক নারী মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। এমন নির্যাতনের শিকার হয়ে ও বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁরা। ঘটনার একমাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার না করায় দিশেহারা হয়ে বিচারের আশায় পথে পথে ঘুরছেন পরিবারটি।

ফরিদপুর শহরে একটি পত্রিকা অফিসে সংবাদ সম্মেলন করেন লাভলী আক্তার। এ সময় তার বৃদ্ধা মা খোদেজা বেগম ও এক শিশু সন্তান উপস্থিত ছিলেন। লাভলী আক্তার মধুখালী উপজেলার কামারখালী পূর্ব আড়পাড়ার মৃত গুল মোহাম্মাদের একমাত্র মেয়ে। তিনি দীর্ঘ ১৪ বছর ব্রিটিশ হাইকমিশনের সিকিউরিটি এন্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগে চাকরি করেছেন।

লাভলী আক্তার সংবাদ সম্মেলনে জানান, দীর্ঘদিন ব্রিটিশ হাইকমিশনে চাকরির সুবাদে তাঁর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে ব্রিটিশ নাগরিক ডেরেক গ্রিফিথসের সাথে। এক পর্যায়ে তারা বিয়ে করেন। তার স্বামী খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী হওয়ার বিষয়টি স্থানীয় প্রতিপক্ষ জানতে পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। গত বছরের জুনে চাকরি ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসলে স্থানীয়রা নানাভাবে নির্যাতন চালাতে থাকে। এক পর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যান জাকির খানের নির্দেশে তাকে পুকুরের পানিতে চুবিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে স্থানীয়রা।

তিনি বলেন- স্থানীয় গোলাম খন্দকার, কামরুল খন্দকার, আলী শেখ গংদের সাথে ওয়ারিশ সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত বিরোধ রয়েছে। এর জেরে আমাদের উচ্ছেদ করতে ধর্মীয় অপবাদ দিয়ে গত ১২ এপ্রিল রাত ১০ টার দিকে স্থানীয় ইউপি সদস্য আলী শেখের নেতৃত্বে কয়েকশ দুর্বৃত্ত আমার বাড়িঘর লুটপাট ও ভাঙচুর করে। তখন আমি ত্রিপল নাইনে কল দিয়ে পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে দুজনকে আটক করে নিয়ে যায়। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে রাত ৩ টার দিকে আমার নির্মাণাধীন তিনতলা ভবন ও অন্যান্য বসতঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এছাড়া আমার হাঁস-মুরগির খামারসহ প্রায় ৫০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় এবং পুকুরে বিষ দিয়ে মাছ মেরে ফেলে। এমন ভয়াবহ ঘটনা আমাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, এ ঘটনায় ২১ জনের নাম উল্লেখ করে মধুখালী থানায় মামলা করলে পুলিশ আজও কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরেবেড়াচ্ছে এবং আমার নামে মানহানিকর তথ্য অপপ্রচার করে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। ভয়ে মা ও সন্তানকে নিয়ে অসহায় অবস্থায় পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছি, আমার বসতবাড়িতেও যেতে পারছি না। আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। আমি প্রশাসনের কাছে গেলেও বিচার পাচ্ছি না। আমার কোনো কথাই শুনছেন না। আমার সমস্ত মালামাল উদ্ধারসহ ন্যায়বিচার দাবি করছি।

লাভলী আক্তারের মা খোদেজা বেগম বলেন- এই জমিজমা নিয়ে ওরা আমার আব্বাকেও (লাভলীর নানা) ডেকে হত্যা করে সমস্ত জমিজমা দখল করে নিয়ে যায়। বর্তমানে আমার মেয়ে সেই জমি উদ্ধারে কাজ করতে গেলেই শত্রু হয়ে যায়। আমার মেয়েকে মেরে ফেলতে পারলে সব জমিজমা ওদের হয়ে যাবে।

এদিকে এসব বিষয়ে জানতে স্থানীয় ইউপি সদস্য আলী শেখের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকার ফোন করলে কেটে দেয়ায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম নুরুজ্জামান বলেন, লাভলী আক্তারের ভবন তোলার সময় রাস্তার পাশে জায়গা নিয়ে স্থানীয়দের সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে ধর্মীয় অপবাদ দিয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে সেটি আমার জানা নেই।