প্রাক্তন স্ত্রীর সাথে সখ্যতার প্রতিবাদ করায় স্ত্রীকে নির্যাতন, হাসপাতালে লাশ রেখে পালালো স্বামী
ফরিদপুরে রিক্তা বেগম (২৯) নামে এক গৃহবধুর মরদেহ হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়েছেন স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির সদস্যরা। একদিন পর খবর পেয়ে মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাত ৯ টার দিকে পরিবারের সদস্যরা ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে। পরিবারের অভিযোগ, মৃতের স্বামী প্রাক্তন স্ত্রীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ও সখ্যতা গড়ে তোলার প্রতিবাদ করায় স্বামী জাকির মোল্যার নির্মম নির্যাতনে রিক্তার মৃত্যু হয়েছে।
নিহত রিক্তা বেগম উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের পাঁচকুল গ্রামের আজিজ শিকদারের মেয়ে এবং পাশ্ববর্তী দীঘলকান্দা গ্রামের আনোয়ার মোল্লার ছেলে প্রবাস ফেরত জাকির মোল্যার স্ত্রী। প্রায় ১২ বছর পূর্বে পারিবারিকভাবে তাঁদের বিয়ে হয় এবং বর্তমানে ৬ বছর বয়সি পুত্র সন্তান রয়েছে।
আজ বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে দেখা যায় লাশের অপেক্ষায় বসে আছেন স্বজনরা। এ সময় নিহতের বড় বোন মুক্তা বেগম বলেন, জাকির মোল্যা পূর্বে বরিশালের এক মেয়েকে বিয়ে করেছিল। ওই বউয়ের সাথে ডিভোর্স হওয়ার আমার বোনকে বিয়ে করে। বিয়ের ৫ বছর পর মালয়েশিয়া চলে যায়। সেখানে থাকা অবস্থায় আগের স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করে। এরপর গত ৮ মাস আগে দেশে চলে আসার পর ওই নারীর সাথে কয়েকবার দেখা করে এবং মোবাইলে নিয়মিত কথা বলত। এসব কর্মকান্ডে আমার বোন বাঁধা দিত এবং নিষেধ করত। এ কারনে বিভিন্ন সময় মারধর ও নির্যাতন করত। সোমবার রাতেও রিক্তাকে মারধর করে। তখন আমার বোন মা’কে ফোন দিয়ে জানায়, ওরে লোহার রড দিয়ে পিটিয়েছে।
আরেক বোন হাফিজা বেগম জানান, রিক্তাকে মারধর করে মুখে বিষ ঢেলে ঘরে আটকিয়ে রাখে। পরে ওইদিন প্রথমে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে গোপনে রিক্তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতেই তার মৃত্যু হয়। রিক্তা মারা যাওয়ার পর তার মরদেহটি হাসপাতালে ফেলে রেখে তার স্বামীসহ পরিবারের সবাই পালিয়ে যায়। এরপর আত্মগোপনে থেকে মঙ্গলবার দুপুরে জাকির মোল্লা আমাদেরকে মোবাইল ফোনে জানায়, রিক্তা বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে। আপনারা ফরিদপুর হাসপাতালে আসেন। পরে আমরা ফরিদপুর মেডিকেলে গিয়ে রিক্তার মরদেহ দেখতে পাই। ওর শরীরের পেটে, মাথায়, হাতে, কানে সহ বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে৷ আমার বোনকে জাকির ও তার পরিবারের লোকজন পিটিয়ে হত্যা করছে। আমরা এর বিচার দাবি করছি।
এ ব্যাপারে জাকির মোল্লা ও তার পরিবারের লোকজন আত্মগোপনে থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। মোবাইল নাম্বারটাও বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে বুধবার ভাঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রজিৎ মল্লিক বলেন, বুধবার বিষয়টি জানতে পেরেছি। এলাকায় পুলিশ পাঠানো হবে। তাছাড়া এ বিষয়ে আমরা কোন অভিযোগ পাইনি। তদন্ত পুর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।