ফরিদপুরে জনপরিসরে নারীর নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা:
ধর্ষণ বা যৌণ হয়রানির ৮০ শতাংশ ঘটনা আপোষ হওয়ায় কমছে বিচার, বাড়ছে ঘটনা
ধর্ষণ বা যৌণ হয়রানির ৮০ শতাংশ ঘটনা নানা কারনে স্থানীয়ভাবল আপোষ হওয়ায় বিচার কম হচ্ছে। যে কারনে ধর্ষণ বা যৌন হয়রানির মতো ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। ফরিদপুরে জনপরিসরে নারীর নিরাপত্তা: বাস্তবতা, আইন ও করণীয় নিয়ে এক বিশেষ আলোচনা সভায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। এছাড়া জনপরিসরে নারীরা প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানি, সহিংসতা ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বলে জানানো হয়।
আজ শনিবার বিকালে ফরিদপুর শহরের বেলপিয়াতো নামে একটি রেষ্টুরেন্টের হলরুমে নারী-নেতৃত্বাধীন সংগঠন নন্দিতা সুরক্ষার আয়োজনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনটি ফরিদপুর জেলায় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)-এর সূচনা-৩ প্রকল্পের আওতায় নারী, তরুণ ও দলিত জনগোষ্ঠীর অধিকার ও ন্যায্যতা নিয়ে কাজ করে আসছে।
এ সময় বক্তারা বলেন, “জনপরিসরে নারীরা প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানি, সহিংসতা ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। রাস্তাঘাট, গণপরিবহন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতার কারণে তাদের সামাজিক অংশগ্রহণ ও স্বাধীন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। যদিও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩), দণ্ডবিধি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ একাধিক আইন রয়েছে, তবে সচেতনতার অভাব, আইনের যথাযথ প্রয়োগের সীমাবদ্ধতা এবং সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে সমস্যা থেকে যাচ্ছে।
এছাড়া জনপরিসরে নারীর প্রতি সহিংসতার বর্তমান অবস্থা, আইনগত সুরক্ষা ও বিদ্যমান চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি তরুণ ও এক্টিভিস্টদের ভূমিকা, প্রতিরোধমূলক উদ্যোগ এবং ভবিষ্যতের অ্যাডভোকেসি কার্যক্রম নিয়ে মতবিনিময় হয়। অংশগ্রহণকারীরা জনপরিসরে নারীর নিরাপত্তাহীনতার মূল কারণ, বিদ্যমান আইন ও তার প্রয়োগের পথ সম্পর্কে ধারণা পান। পাশাপাশি যৌথ আলোচনার ভিত্তিতে একটি কার্যকর অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি হবে, যা ভবিষ্যতে নিরাপদ জনপরিসর গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছে নন্দিতা সুরক্ষা।
ফরিদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সহকারী সরকারী কৌঁসুলি (এপিপি) অর্চনা দাস বলেন- ধর্ষণের বা যৌন হয়রানির কঠিন সাজা থাকার পরেও ধর্ষণ কেন বাড়ছে। বাড়ছে একটা কারণে, ধর্ষণের ৮০ শতাংশ ঘটনা আপোষ হয়ে যায়। প্রথমদিকে উদগ্রীব থাকে শেষে টাকার দিকে চলে যায়। একটা সময় ওই পরিবার ভাবে, আমার মেয়েটাকে তো বিয়ে দিতে হবে, সেই ভাবনায় টাকাটা নিয়ে আপোষ করে ফেলে৷ আরেকটি প্রবণতা ধর্ষকের সাথে বিয়ে দেয়া হয়। অনেক সময় ভয়ে বিচার ও চায় না ভুক্তভোগী পরিবার। এসব আপোসের কারণেই বিচার কম হয়। যে কারনে সমাজে এ ধরনের ঘটনা বেড়েই চলছে। এক্ষেত্রে সকলকে ভুক্তভোগী পরিবারের পাশে দাড়ানোর এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহ্বান করেন।
এতে যুব এক্টিভিস্ট, নারী ও পুরুষ স্বেচ্ছাসেবক, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি, আইনজীবী, অধিকারকর্মী, স্থানীয় কমিউনিটির প্রতিনিধি, যৌন কর্মী, দলিত নারী, শ্রমজীবী নারী, নারী উদ্যক্তা এবং গণমাধ্যমকর্মীসহ মোট ৩০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রকল্প সমন্বয়কারী ও নন্দিতা সুরক্ষার পরিচালক তাহিয়াতুল জান্নাত রেমি, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রিসালাতুলনাহার রিনা, যুব এক্টিভিস্ট মোহাম্মদ তুষার আবদুল্লাহ সহ অনেকে।