ঢাকা ০৭:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ২৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
রাজবাড়ীতে দালালের খপ্পরে সর্বস্বান্ত তিন পরিবার  পাংশা হাসপাতালে এমএসআরের কাজের টেন্ডারে অনিয়মের অভিযোগ পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদে ইলিশ  অভিযানে ৪০০ মিটার বাঁধ উচ্ছেদ  রাজবাড়ীর পদ্মা ও গড়াই নদী থেকে প্রকাশ্যে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার বালু বিক্রি ফরিদপুরে শ্রীধাম শ্রী অঙ্গন মার্কেটের ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত পার্কিং ফি কমানোর দাবিতে অটোচালকদের বিক্ষোভ রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১ টি গবাদি পশু দগ্ধ,৩ টি ঘর পুড়ে ছাই  ফিলিস্তিনিদের প্রতি‌ সংহতি জানিয়ে গাজা ও রাফায় ইসরাইলি বর্বরোচিত নৃশংসতার প্রতিবাদে ফরিদপুরে বিএনপির প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত সালথায় আধিপত্য বিস্তারে স্থানীয় দুই পক্ষের সংঘর্ষ ফরিদপুরে খানাখন্দ সড়কে অতিরিক্ত গতিতে ওভারটেকিংয়ে ঝড়ল ৭ প্রাণ

সালথায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

সালথা প্রতিনিধি:

ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের মুরুটিয়া গ্রামে দফায় দফায় এ সংঘর্ষ হয়। স্থানীয়রা জানান, এতে এক পক্ষের নেতৃত্ব দেন মাঝারদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহসভাপতি হারুন মিয়ার ছেলে মিন্টু মিয়া এবং অপরপক্ষের নেতৃত্ব দেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আফছার মাতুব্বরের সমর্থক বেলায়েত মোল্যা।

আগে থেকেই দুপক্ষের মধ্যে বিরোধ ছিল। এর জেরে দুপুরে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয়। এ সময় বেলায়েত মোল্যার সমর্থক আজিজুল শেখকে (৪০) কুপিয়ে জখম করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।

আহত আজিজুল জানায়, মাঝারদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহ- সভাপতি হারুন মিয়ার ছেলে মিন্টু মিয়া, মাঝারদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি টিটুল মেম্বার, ও বিএনপির সমর্থক তুহিন মিয়া, আকরাম শেক, আজাদ সেক, সুজন মিয়া, কায়দো মীর সহ ১৫-২০ জন লোক ২ এপ্রিল২৫ ইং তারিখ সকাল ১০ টার দিকে বাড়ির ওপর এসে বলে ভালোই তো আছিস, অনেক পিয়াজ পাইছিস। আমাদের ৩ লাখ টাকা দিবি তা না হলে তোদের এলাকা থেকে বিতাড়িত করে দিবো।  ঐ টাকা না দেওয়ায় তারা আমার জামার কলার ধরে মিন্টু মিয়ার হাতে থাকা রানদা দিয়ে মাথা লক্ষ করিয়া কোপ মারে উক্ত কোপ ডান চোখের নিচে লেগে হাড় কাটা রক্তাক্ত জখম হয় ও বলে যায় কালকের মধ্যে চাদা না দিলে তোদের বংশ নির্বংশ করে দিবো।

এর পর স্থানীরা আজিজিলকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

এর সূত্র ধরে ফের বিকালে দুই গ্রুপে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। এ সময় উভয় পক্ষের বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সমর্থক কৃষক কবির শেখের বসতঘরে আগুন দেওয়াসহ ১০ থেকে ১২টি খড় ও পাটখড়ির গাদায় আগুন দেওয়া হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

আওয়ামী লীগ সমর্থক বেলায়েত মোল্যা বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে গ্রামের বিএনপি নেতা মিন্টু মিয়া ও ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য টিটুল মিয়া আমার কাছেসহ আমাদের অনেকের কাছে টাকা চায়।

আমাদের বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়ে বলে আসছে- এলাকায় থাকতে হলে টাকা দিয়ে থাকতে হবে। টাকা না দেওয়ায় কয়েকদিন আগে আমাকে মারধর করা হয়। এরপরও আমি চুপচাপ ছিলাম। কিন্তু ওরা পায়ে পাড়া দিয়ে ঝামেলা করতে আসে। কতক্ষণ ধৈর্য ধরে থাকা যায়!

“মালয়েশিয়া থেকে অসুস্থ হয়ে আসা আজিজুলের কাছেও টাকা চায়। ও যোগাড় করে ৫০ হাজার টাকা দিতে যায়। কিন্তু টাকা কম হওয়ায় ওরে কোপানো হয়। ঘটনা শোনার পর আমরা জোটবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানাই। পরে ওরা ঢাল-সড়কি নিয়ে আমার বাড়িতে হামলা চালানোর চেষ্টা করে, তখন আমরাও ধাওয়া দেই। পরে ওরা আমাদের দলের চার থেকে পাঁচটি বাড়ি ভাঙচুর করেছে। একজনের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে এবং কয়েকজনকে কোপানো হয়েছে।

এদিকে বিএনপি নেতা মিন্টু মিয়া ভিন্ন অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, “রোজার ভেতর পাশ্ববর্তী খলিশপুট্টি মাঠে ইউনিয়ন বিএনপির ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই অনুষ্ঠানে গ্রাম থেকে লোকজন নিয়ে আমি যাওয়ায় আমার ওপর আফছার চেয়ারম্যানের দুই ছেলে নাজমুল ও স্বপন মাতুব্বর ক্ষিপ্ত হয়। আজকের ঘটনায় ওরাই নেতৃত্ব দিয়েছে।

“গতকাল আমার দলের আকরাম নামের একজন পেঁয়াজ তোলার জন্য ‘কৃষাণ’ চায় ওইপক্ষের দুজনের কাছে। ওরা তখন জানায়, নাজমুল নিষেধ করেছে আমাদের দলের লোকজনকে ‘কৃষাণ’ দিতে। এ নিয়ে আমার দলের লোকজন আজ দুপুরে ওদের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে বাঁধা দেওয়ার পরেই মারামারি লেগেছে বলে আমি শুনেছি। কোনো চাঁদা চাওয়া নিয়ে মারামারি হয়নি। এখন ওরা মিথ্যাচার করছে।

তিনি অভিযোগ করেন, “আমার দলের অনেককে আহত করা হয়েছে। আমার বাড়িঘরে ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে আওয়ামী লীগের লোকজন।

সালথা থানার ওসি মো. আতাউর রহমান বলেন, এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পূর্ব বিরোধের জের ধরে গ্রামের আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে।

একটি বাড়ি ভাঙচুরসহ কয়েকটি খড়ের গাদায় আগুন দেওয়া হয়েছে। এখনো কোনো পক্ষ অভিযোগ দেয়নি।

 

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য
আপডেট সময় ০১:৫৫:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ এপ্রিল ২০২৫
৪৯ বার পড়া হয়েছে

সালথায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

আপডেট সময় ০১:৫৫:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ এপ্রিল ২০২৫

ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের মুরুটিয়া গ্রামে দফায় দফায় এ সংঘর্ষ হয়। স্থানীয়রা জানান, এতে এক পক্ষের নেতৃত্ব দেন মাঝারদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহসভাপতি হারুন মিয়ার ছেলে মিন্টু মিয়া এবং অপরপক্ষের নেতৃত্ব দেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আফছার মাতুব্বরের সমর্থক বেলায়েত মোল্যা।

আগে থেকেই দুপক্ষের মধ্যে বিরোধ ছিল। এর জেরে দুপুরে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয়। এ সময় বেলায়েত মোল্যার সমর্থক আজিজুল শেখকে (৪০) কুপিয়ে জখম করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।

আহত আজিজুল জানায়, মাঝারদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহ- সভাপতি হারুন মিয়ার ছেলে মিন্টু মিয়া, মাঝারদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি টিটুল মেম্বার, ও বিএনপির সমর্থক তুহিন মিয়া, আকরাম শেক, আজাদ সেক, সুজন মিয়া, কায়দো মীর সহ ১৫-২০ জন লোক ২ এপ্রিল২৫ ইং তারিখ সকাল ১০ টার দিকে বাড়ির ওপর এসে বলে ভালোই তো আছিস, অনেক পিয়াজ পাইছিস। আমাদের ৩ লাখ টাকা দিবি তা না হলে তোদের এলাকা থেকে বিতাড়িত করে দিবো।  ঐ টাকা না দেওয়ায় তারা আমার জামার কলার ধরে মিন্টু মিয়ার হাতে থাকা রানদা দিয়ে মাথা লক্ষ করিয়া কোপ মারে উক্ত কোপ ডান চোখের নিচে লেগে হাড় কাটা রক্তাক্ত জখম হয় ও বলে যায় কালকের মধ্যে চাদা না দিলে তোদের বংশ নির্বংশ করে দিবো।

এর পর স্থানীরা আজিজিলকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

এর সূত্র ধরে ফের বিকালে দুই গ্রুপে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। এ সময় উভয় পক্ষের বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সমর্থক কৃষক কবির শেখের বসতঘরে আগুন দেওয়াসহ ১০ থেকে ১২টি খড় ও পাটখড়ির গাদায় আগুন দেওয়া হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

আওয়ামী লীগ সমর্থক বেলায়েত মোল্যা বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে গ্রামের বিএনপি নেতা মিন্টু মিয়া ও ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য টিটুল মিয়া আমার কাছেসহ আমাদের অনেকের কাছে টাকা চায়।

আমাদের বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়ে বলে আসছে- এলাকায় থাকতে হলে টাকা দিয়ে থাকতে হবে। টাকা না দেওয়ায় কয়েকদিন আগে আমাকে মারধর করা হয়। এরপরও আমি চুপচাপ ছিলাম। কিন্তু ওরা পায়ে পাড়া দিয়ে ঝামেলা করতে আসে। কতক্ষণ ধৈর্য ধরে থাকা যায়!

“মালয়েশিয়া থেকে অসুস্থ হয়ে আসা আজিজুলের কাছেও টাকা চায়। ও যোগাড় করে ৫০ হাজার টাকা দিতে যায়। কিন্তু টাকা কম হওয়ায় ওরে কোপানো হয়। ঘটনা শোনার পর আমরা জোটবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানাই। পরে ওরা ঢাল-সড়কি নিয়ে আমার বাড়িতে হামলা চালানোর চেষ্টা করে, তখন আমরাও ধাওয়া দেই। পরে ওরা আমাদের দলের চার থেকে পাঁচটি বাড়ি ভাঙচুর করেছে। একজনের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে এবং কয়েকজনকে কোপানো হয়েছে।

এদিকে বিএনপি নেতা মিন্টু মিয়া ভিন্ন অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, “রোজার ভেতর পাশ্ববর্তী খলিশপুট্টি মাঠে ইউনিয়ন বিএনপির ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই অনুষ্ঠানে গ্রাম থেকে লোকজন নিয়ে আমি যাওয়ায় আমার ওপর আফছার চেয়ারম্যানের দুই ছেলে নাজমুল ও স্বপন মাতুব্বর ক্ষিপ্ত হয়। আজকের ঘটনায় ওরাই নেতৃত্ব দিয়েছে।

“গতকাল আমার দলের আকরাম নামের একজন পেঁয়াজ তোলার জন্য ‘কৃষাণ’ চায় ওইপক্ষের দুজনের কাছে। ওরা তখন জানায়, নাজমুল নিষেধ করেছে আমাদের দলের লোকজনকে ‘কৃষাণ’ দিতে। এ নিয়ে আমার দলের লোকজন আজ দুপুরে ওদের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে বাঁধা দেওয়ার পরেই মারামারি লেগেছে বলে আমি শুনেছি। কোনো চাঁদা চাওয়া নিয়ে মারামারি হয়নি। এখন ওরা মিথ্যাচার করছে।

তিনি অভিযোগ করেন, “আমার দলের অনেককে আহত করা হয়েছে। আমার বাড়িঘরে ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে আওয়ামী লীগের লোকজন।

সালথা থানার ওসি মো. আতাউর রহমান বলেন, এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পূর্ব বিরোধের জের ধরে গ্রামের আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে।

একটি বাড়ি ভাঙচুরসহ কয়েকটি খড়ের গাদায় আগুন দেওয়া হয়েছে। এখনো কোনো পক্ষ অভিযোগ দেয়নি।